হাসপাতালের লাশঘরের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুদান বিকাশ বড়ুয়া। কাঁদতে কাঁদতে মেয়ে তিথি বড়ুয়াকে (২১) খুঁজছিলেন। স্বজনদের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলেন, তাঁকে যেন মেয়ের কাছে নিয়ে যায়। লাশঘরে মেয়ের নিথর দেহ থাকলেও তা ছিল তালাবদ্ধ। সড়ক দুর্ঘটনায় আদরের সন্তান যে পৃথিবীতে আর নেই, তা তখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল তাঁর। তাই বারবার মেয়েকে দেখতে চাচ্ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৯জুন) বিকেল সোয়া চারটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এই হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। এর পৌনে দুই ঘণ্টা আগে বেলা আড়াইটায় নগরের জাকির হোসেন সড়কের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের সামনে বাসের ধাক্কায় মারা যান কলেজছাত্রী তিথি বড়ুয়া। তাঁকে বহনকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে শহর এলাকার একটি বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তিথির। এ অটোরিকশায় তিথির আরও তিন বন্ধু ছিলেন। তবে তাঁরা অক্ষত রয়েছেন। তাঁরা নগরের ফয়’স লেকে বেড়াতে যাচ্ছিলেন বলে জানান আত্মীয়রা।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছামতী গ্রামের সুদান বিকাশ বড়ুয়ার দুই মেয়ের মধ্যে ছোট তিথি বড়ুয়া। চট্টগ্রামের সরকারি মহিলা কলেজে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম নগরের কসমোপলিটন এলাকায় তাঁদের বাসা।
তিথি বড়ুয়ার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে প্রথমে ছুটে আসেন বড় বোন চৈতি বড়ুয়াসহ আত্মীয়স্বজন। কিছুক্ষণ পর আসেন বাবা সুদান বিকাশ বড়ুয়া। এসেই মেয়ের জন্য আহাজারি শুরু করেন, ‘আমার মেয়ে কই। আমাকে একটু দেখাও। আমার কলিজা চলে গেছে। ওরা আমার কলিজাকে শেষ করে দিয়েছে।’ আত্মীয়স্বজনের সান্ত্বনাতেও কান্না থামছিল না সন্তানহারা এই বাবার।
মেয়ের জন্য বাবা যখন হাসপাতালের লাশঘরের সামনে আহাজারি করছিলেন, তখন মা সুজাতা বড়ুয়াকে যেতে হয় নগরের খুলশী থানায়। ঘাতক বাস ও চালকের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বাসচালক মোহাম্মদ পারভেজকে (২০) আটক এবং বাসটি জব্দ করা হয়েছে বলে জানান খুলশী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাদেকা আফরোজা। তিনি বলেন, তিথি বড়ুয়া ও আরও কয়েকজন অটোরিকশা করে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। অন্যরা সুস্থ আছেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। সূত্র: প্রথম আলো